“স্বাধীনতাত্তোর প্রাথমিক শিক্ষায় বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় প্রাথমিক শিক্ষা”

“স্বাধীনতাত্তোর প্রাথমিক শিক্ষায় বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় প্রাথমিক শিক্ষা”
বিষয়ের উপর আমার লেখা প্রবন্ধের উপর উপজেলা শিক্ষা অফিস, রূপগঞ্জ কর্তৃক আয়োজিত উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে ভার্চ্যুয়াল সেমিনার। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার জনাব জাহেদা আখতার, অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার জনাব আক্রাম হোসেন
জাতির ভাগ্য উন্নয়নে সারাজীবন যিনি সংগ্রাম করে গেছেন, তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি। বাঙালির শিক্ষা-সংস্কৃতি, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নে তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। তিনি অনুভব করতে পেরেছিলেন দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য, সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘শিক্ষা’। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা’। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন ছাড়া জাতীয় শিক্ষার ভিত মজবুত করা সম্ভব নয়।
বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনা তার অন্যতম রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তিভূমি। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ৮টি শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন পেশ করে। সব কমিশন ছিল এ দেশের মানুষের মৌলচেতনা, সমাজ সংস্কৃতি ও কৃষ্টিবিরোধী। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনা সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায় ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে। সেই ভাষনে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাথমিক শিক্ষার যে ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন, তা হলো, সে সময়ে বাঙালি জাতির অর্ধেকেরও বেশি শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হতো। অর্থাৎ সে সময়ে এ দেশের শতকরা মাত্র ১৮ জন বালক এবং ৬ জন বালিকা প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগপেত। সেই ভাষণে তিনি সুস্পষ্ট কিছু প্রস্তাব রেখেছিলেন। যথাঃ
প্রথমত, ‘সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষাখাতে পুঁজি বিনিয়োগের চেয়ে উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ আর কিছু হতে পারে না।’
দ্বিতীয়তা, ‘নিরক্ষতা অবশ্যই দূর করতে হবে। পাঁচ বছর বয়স্ক শিশুদের বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষাদানের
জন্যে একটি ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালু করতে হবে।’
তৃতীয়ত, ‘দারিদ্র্য যেন উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মেধাবীদের জন্য বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।”
বঙ্গবন্ধু শিক্ষা নিয়ে ১৯৭০ সালে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা তিনি শুধু ভাষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। বাস্তবেও রূপদান করেছিলেন। স্বাধীনতার পর ভঙ্গুর শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। প্রাথমিক শিক্ষা সরকারিকরণ, সংবিধানে শিক্ষা বাধ্যতামূলক, শিক্ষা কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনসহ নানা কার্যক্রম বাস্তবায়িত করেছেন। শিক্ষা ব্যবস্থাকে বৈষম্যহীন ও যুগোপযোগী করার জন্য কাজ করেছেন বঙ্গবন্ধু। তবে আমূল পরিবর্তনটা তিনি এনেছিলেন প্রাথমিক ও উচ্চশিক্ষায়।
বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় শিক্ষা সম্পর্কিত যে আইন প্রণয়ন করেছিলেন এবং বাস্তবায়নে চলমান ছিলেন সেগুলো হলো প্রাথমিক স্কুল অ্যাক্ট ১৯৭৪
বঙ্গবন্ধুর শাসন আমলে আরও দুটি শিক্ষাবিষয়ক আইন প্রণীত হয়। তা হলো- মাদ্রাসা এডুকেশন অর্ডিন্যান্স ১৯৭২, প্রাইমারী এডুকেশন অ্যাক্ট ১৯৭৪।
এই আইন প্রণয়নের পর প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়। বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক করে শিক্ষাগ্রহণকে সহজলভ্য করে দিয়েছিলেন।
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেই ঐ বছরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বকেয়া বেতন মওকুফ করেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতনভাতা প্রদান করে শিক্ষাব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। তখন শিক্ষার্থীদের মাঝে বই, খাতা, পেনসিলসহ বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি বিদেশি বিস্কুট, ছাতু, বিলেতি দুধসহ নানা খাদ্যসামগ্রীও শিক্ষার্থীদের মাঝে সরবরাহ করা হয়। ধ্বংসপ্রাপ্ত, ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলো মেরামত, ১১ হাজার নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন, ৪৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগ ও চাকরি সরকারি করণ করা হয়। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জানুয়ারি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী বঙ্গবন্ধুর সম্মতিক্রমে শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠনে ৫১ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দেন, যা সদ্য স্বাধীন দেশের শিক্ষার ভিত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বঙ্গবন্ধু টোল, মক্তব, মাদরাসা, পাঠশালা তথা ব্রিটিশ ভারত ও পাকিস্তানের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষাব্যবস্থার দিকনির্দেশনা প্রদান করার জন্য বিখ্যাত শিক্ষাবিদ বিজ্ঞানী ড. কুদরত-এ-খুদাকে সভাপতি করে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর একান্ত ইচ্ছায় ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে একটি সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। কমিশনে প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে আট বছর করার সুপারিশ করা হয়। উচ্চশিক্ষা গ্রহণেচ্ছুদের জন্য সাক্ষরতা অভিযান নামে বিশেষ একটি পদক্ষেপের কথা শিক্ষা কমিশনে উল্লেখ করা হয়। পাঁচ বছরের মধ্যে ১১-৪৫ বছর বয়সী সাড়ে তিন কোটি নিরক্ষর মানুষকে অক্ষরজ্ঞান দেয়ার প্রস্তাব ছিল এই শিক্ষা কমিশনে। অর্থাৎ শুধু নিজে শিক্ষিত হলে চলবে না, বরং নিরক্ষরদের শিক্ষিত করার মাধ্যমে সামাজিকতা তৈরি ও দেশ গঠনে অবদান রাখতে হবে।
বঙ্গবন্ধু বলতেন ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এ পর্যন্ত শুধু আমলাই সৃষ্টি করেছে, মানুষ সৃষ্টি করেনি। তিনি মানুষ সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করেন। শিক্ষা কমিশনে মেধাবীদের জন্য বিশেষ ধরনের মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, অসচ্ছল বালক বালিকাদের সরকারি বৃত্তি, ক্যাডেট ও রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে কারিগরি, সাধারণ ও বিজ্ঞান বিষয় অন্তর্ভুক্তির জন্য সুপারিশ করা হয়। বাংলাভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করে ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পঞ্চম শ্রেণি ও ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অষ্টম শ্রেণির শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেন। আইনের মাধ্যমে শিশুদের নাম ও জাতীয়ভার অধিকারের স্বীকৃতি, সব ধরনের অবহেলা, শোষণ, নিষ্ঠুরতা, নির্যাতন, খারাপ কাজে ব্যবহারসহ সকল অপকর্ম থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাঁর আগ্রহে ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জুন ‘জাতীয় শিশু আইন’ জারি করা হয়।
কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ডের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পদক্ষেপ মুখ থুবড়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিক শিক্ষায় স্থবিরতা নেমে আসে। ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন আলোর মুখ দেখেনি। এরপর দীর্ঘ সময় প্রাথমিক শিক্ষাসহ শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে চলে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বস্তুত ঐ সময়ের বাস্তবসম্মত কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না।
১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার সরকার প্রথমবার ক্ষমতা গ্রহণের পর শিক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রণয়ন করে। অবহেলিত প্রাথমিক শিক্ষা যেন আবার প্রাণ ফিরে পায়। প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে সময়োপযোগী ও কার্যকর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’ প্রণয়ন করে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে একটি আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন জাতি গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণে ‘ভিশন-২০২১’ শীর্ষক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়।
বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো একীভূত শিক্ষা ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করে সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। এখন বিদ্যালয় গমনোপযোগী প্রায় সকল শিশুই বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রাথমিক শিক্ষার পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রতি বছর প্রায় দুই কোটি শিক্ষার্থীর হাতে চাররঙ এর আকর্ষণীয় সম্পূর্ণ নতুন পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে শিক্ষা-বছরের প্রথম দিনই ‘বই উৎসব’ এর মাধ্যমে তুলে দেয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ, সংস্কার, নিরাপদ পানীয়জলের ব্যবস্থা, স্যানিটেশন ও ওয়াশব্লক স্থাপনসহ অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এবং আরও নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। বর্তমান সময়ে একটি গ্রামের সবচেয়ে সুন্দর ভবনটি হলো ওই গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।
শিক্ষার্থীদের মেধাযাচাই ও মূল্যায়নের জন্য ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সারাদেশে অভিন্ন প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের পাশাপাশি তাদের শারীরিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধন ও নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশের জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতভাগ উপবৃত্তি প্রদান, মিড-ডে মিল চালু, স্টুডেন্ট কাউন্সিল গঠন, কাব স্কাউট দল গঠন, ক্ষুদে ডাক্তার দল গঠন, প্রাক্তন শিক্ষার্থী অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠন, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট, জাতীয় পর্যায়ে আন্তঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অন্যতম।
বর্তমানে আমরা কঠিন সময় পার করছি। করোনা ভাইরাসের কারণে সারাবিশ্বে আজ মহামারি দেখা দিয়েছে। আমরা সবাই এখন আতঙ্কগ্রস্ত ও দিশেহারা। দিন দিন যেন সময় কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। করোনাজনিত এই সংকটকালে আমরা আমাদের শিশুদের লেখাপড়ার দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করতে পারছি না। গত ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ পর্যন্ত প্রায় ১৮ মাস ব্যাপি আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ ছিল। ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে যা কোনোভাবে কাম্য নয়।
বাঙালি জাতিকে ভালোবেসে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ দেশের মানুষের সঙ্গে ছিল তাঁর অবিনশ্বর আত্মার বন্ধন। ১৫ আগস্ট ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের পরও এ বন্ধন ছিন্ন হয়নি। ‘সোনার বাংলা’ গড়তে তিনি যে সুদূরপ্রসারী কর্মযজ্ঞের সূচনা করেছিলেন এর মাধ্যমে বাঙালির হৃদয়পটে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন এই মহান নেতা। বাংলার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশটি স্বাধীন না করলে আমরা প্রিয় বাংলাদেশ পেতাম না। তিনি সৌভাগ্যবান জাতিকে একটি স্বাধীন দেশ ও একটি পতাকা উপহার দিয়ে গেছেন। তাঁর জন্ম না হলে হয়তো আজও আমাদের পরাধীন হয়ে থাকতে হতো।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, বক্তৃতা, চিঠিপত্র আর তাঁর লেখা বই অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা থেকেই প্রমাণ মেলে শিক্ষার প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগের বিষয়টি। বাঙালির শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও ন্যায্য অধিকারের কথা তিনি যেভাবে অনুধাবন করেছেন তা বাঙালির ইতিহাসে অদ্বিতীয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ এবং ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭২৪ জন শিক্ষককে সরকারিকরণের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতির সোপান রচনা করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা। তারই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিক শিক্ষাকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন। আজকের এই প্রাথমিক শিক্ষা জাতির পিতারই শিক্ষা-ভাবনার ফসল।
২০৩০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ বদ্ধপরিকর। এর অন্যতম লক্ষ্য শিক্ষায় ন্যায্যতা ও একীভূততা অর্জনের পাশাপাশি জীবনব্যাপী শিক্ষা নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যে বর্তমান সরকার দৃঢ়তার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। মহামারি করোনা আমাদের সাময়িকভাবে একটু বাধাগ্রস্ত করলেও আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছি। আর একটু দেরিতে হলেও মুজিববর্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা সফলভাবে বাস্তবায়ন করবো- এই হোক আমাদের প্রত্যাশা। আমাদের দেশের পিছিয়ে পড়া, বঞ্চিত মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা-দর্শনের বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা-ভাবনার সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আরও এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
ধন্যবাদান্তে,
মোঃ মমিনুল ইসলাম
সহকারী শিক্ষক
আতলাশপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ।

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button